SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

On This Page
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - আধান

খ্রিস্টের জন্মের ছয়শ বছর পূর্বে গ্রিক দার্শনিক থেলিস্ সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন যে, সোলেমানী পাথর বা অ্যাম্বারকে (পাইন গাছের শক্ত আঠা) রেশমি কাপড় দিয়ে ঘষলে এগুলো ছোট ছোট কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করতে পারে। অ্যাম্বার (amber)-এর গ্রিক নাম ইলেকট্রন (electron) থেকে ইলেকট্রিসিটি (electricity) বা তড়িৎ বা বিদ্যুৎ শব্দের উত্তৰ হয়েছে।

নিজে কর টেবিলের উপর কতগুলো ছোট ছোট কাগজের টুকরা রাখো। এবার একটি প্লাস্টিকের চিরুনির সাহায্যে কয়েকবার চুল আঁচড়ে চিরুনিটিকে কাগজের টুকরাগুলোর নিকটে ধরো

চিরুনিটি কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করে । চিরুনিটিকে যদি মাথার চুলের সাথে ঘষা না হয় তাহলে কিন্তু কাগজের টুকরোগুলো আকৃষ্ট হবে না। কতগুলো বস্তুকে অন্য কিছু বস্তু দ্বারা ঘষা হলে সেই বস্তু অন্য হালকা বস্তুকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা লাভ করে ।

ঘর্ষণের ফলে প্রত্যেক বস্তুই অন্য বস্তুকে আকর্ষণের কম-বেশি ক্ষমতা অর্জন করে। এ ঘটনাকে তড়িতাহিতকরণ বলে। ঘর্ষণের ফলে যে সব বস্তু অন্য বস্তুকে আকর্ষণের ক্ষমতা অর্জন করে তাদেরকে তড়িতাহিত বস্তু বলে।

ঘর্ষণের ফলে এক বস্তু থেকে অপর বস্তুতে ইলেকট্রন স্থানান্তরিত হয়। ইলেকট্রনের একটি মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক

ধর্ম হচ্ছে আধান বা চার্জ (charge) । ঘর্ষণে তাই বস্তু আধানগ্রস্ত বা আহিত হয় ।

স্থির বা গতিশীল আধানের প্রকৃতি ও প্রভাব বা ক্রিয়াকে তড়িৎ বলে ।

তড়িৎ দু' রকমের হতে পারে। যথা— স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ।

 

স্থির তড়িৎ : স্থির আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে স্থির তড়িৎ বলে ।

 

 চল তড়িৎ: গতিশীল আধানের প্রভাব বা ক্রিয়াকে চল তড়িৎ বলে।

আমরা জানি, প্রত্যেক পদার্থ অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এদেরকে পরমাণু বলে। প্রত্যেক পদার্থের পরমাণু আবার নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। নিউক্লিয়াসে দু রকমের কণা থাকে- প্রোটন ও নিউট্রন । পদার্থ সৃষ্টিকারী এ সব মৌলিক কণাসমূহের (ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের) মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকেই আধান বা চার্জ বলে। প্রোটন ধনাত্মক আধানযুক্ত ও নিউট্রনে কোনো আধান নেই। নিউক্লিয়াসের চারদিকে অবিরত ঘূর্ণায়মান কণা ইলেকট্রন ঋণাত্মক আধানসম্পন্ন। একটি প্রোটনের আধানের পরিমাণ ইলেকট্রনের আধানের সমান। স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণুতে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে। ফলে একটি গোটা পরমাণুতে কোনো তড়িৎ ধর্ম প্রকাশ পায় না। বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা বিভিন্ন। হাইড্রোজেন পরমাণুতে একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রন আছে, কোনো নিউট্রন নেই। হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন থাকে এবং বাইরে থাকে দুটি ইলেকট্রন। নিউক্লিয়াস খুব ভারী বলে পরমাণু থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। পক্ষান্তরে ইলেকট্রনগুলো অপেক্ষাকৃত হাল্‌কা বলে এরা সহজে চলাফেরা করতে পারে এবং পরমাণু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

কোনো পরমাণুতে যতক্ষণ পর্যন্ত ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তা নিস্তড়িত বা তড়িৎ নিরপেক্ষ। কিন্তু পরমাণুতে এদের সংখ্যা সমান না হলে পরমাণু তড়িৎগ্রস্ত হয় অর্থাৎ বস্তুটি তড়িতাহিত হয় । বাহ্যিক বল প্রয়োগ, তাপ প্রয়োগ, রাসায়নিক প্রক্রিয়া ইত্যাদি পদ্ধতি দ্বারা কোনো পরমাণু থেকে মুক্ত ইলেকট্রনকে বের করে আনা যায়। প্রোটন খুব ভারী হওয়ায় এবং নিউক্লীয় বলের প্রভাবে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ থাকায় একে সহজে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে গেলে প্রোটনের আধিক্য দেখা যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক তড়িতাহিত হওয়া। আবার এ বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন অপর কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হলে সেই পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে ঋণাত্মক তড়িতাহিত হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে তাকে তড়িতাহিত হওয়া বলে ।

স্বাভাবিক অবস্থায় পদার্থের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সমান সংখ্যক থাকে। তবে প্রত্যেক পরমাণুরই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি থাকে। ইলেকট্রনের প্রতি এ আসক্তি বিভিন্ন বস্তুতে বিভিন্ন রকম। তাই দুটি বস্তুকে যখন পরস্পরের সংস্পর্শে আনা হয় তখন যে বস্তুর ইলেকট্রন আসক্তি বেশি সে বস্তু অপর বস্তুটি থেকে মুক্ত ইলেকট্রন সংগ্রহ করে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। একটি কাচদণ্ডকে রেশমে ঘষলে এরকম ঘটনা ঘটে। রেশমের ইলেকট্রন আসক্তি কাচের চেয়ে বেশি বলে এদের যখন পরস্পরের সাথে ঘষা হয়, তখন কাচ থেকে ইলেকট্রন রেশমে চলে যায়, ফলে রেশম ঋণাত্মক আধানে এবং কাচদণ্ড ধনাত্মক আধানে আহিত হয়।

আবার ফ্লানেলের সাথে ইবোনাইট দণ্ড ঘষলে, ইবোনাইট দণ্ড ঋণাত্মক আধানে এবং ফ্লানেল ধনাত্মক আধানে আহিত হয়। কারণ, ইবোনাইটের ইলেকট্রন আসক্তি ফ্লানেলের চেয়ে বেশি বলে, পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের ফলে ফ্লানেল থেকে ইলেট্রন ইবোনাইট দণ্ডে চলে আসে।

কাচ বা ইবোনাইট দণ্ডে যে ভিন্ন প্রকৃতির তড়িতের উদ্ভব হচ্ছে তা কাচ বা ইবোনাইটের কোনো বিশেষ ধর্মের জন্য নয়। কাচকে যে কোনো বস্তু দিয়ে ঘষলেই যে ধনাত্মক আধানের সঞ্চার হবে তাও ঠিক নয়, আবার ইবোনাইটকে যে কোনো বস্তু দিয়ে ঘষলেই ঋণাত্মক আধানের সঞ্চার হয় না। যেমন কাচকে রেশম দিয়ে ঘষলে কাচে ধনাত্মক আধানের আর পশম দিয়ে ঘষলে কাচে ঋণাত্মক আধানের উদ্ভব ঘটে। ঘর্ষণের ফলে কোন্ ধরনের আধানের সঞ্চার হবে তা নির্ভর করে যে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে ঘর্ষণ হচ্ছে তাদের প্রকৃতির ওপর। দুটি বন্ধু পরস্পরের সাথে ঘষলে একটিতে ধনাত্মক এবং অপরটিতে ঋণাত্মক আধানের সঞ্চার হয়।

আধানের কোয়ান্টায়ন

অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে যে, প্রকৃতিতে কোনো বস্তুর সর্বমোট আধান একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম মানের পূর্ণ সংখ্যক গুণিতক। ইলেক্ট্রনের আধান হচ্ছে এ নির্দিষ্ট ন্যূনতম মান। ইলেকট্রনের আধান e হলে কোনো বস্তুর মোট আধান, q = ne 

এখানে n হচ্ছে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা। সুতরাং দেখা যায় যে, কোনো বন্ধুতে যে কোনো মানের আধান থাকতে পারে না। কোনো বস্তুতে মোট আধানের পরিমাণ ইলেকট্রনের আধান e =1.6 x 10-19 C এর পূর্ণসংখ্যক গুণিতক হবেই। শুনো বস্তুতে আধানের মান নিরবচ্ছিন্ন হতে পারে না, আধান বিচ্ছিন্ন মানের অর্থাৎ ইলেকট্রনের আধানের গুণিতক হবেই, একে আধানের কোয়ান্টায়ন বলে । সুতরাং দেখা যায় যে, এমন কোনো কণা বা বস্তু পাওয়া সম্ভব, যার আধান 15e বা 7e, কিন্তু 4.65e আধানের কোনো বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়।

আধানের নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা

জগতে মোট আধানের পরিমাণ সর্বদা একই থাকে। অর্থাৎ আধান সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও হয় না। কোনো ভৌত প্রক্রিয়ায় আধান এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত হতে পারে কিন্তু কোনো নতুন আধান যেমন সৃষ্টি হয় না। তেমনি কোনো আধান ধ্বংসও হয় না। কাচদণ্ড ও রেশমি কাপড়ের ঘর্ষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, কাচদণ্ড থেকে যে পরিমাণ ঋণাত্মক আধান রেশমি কাপড়ে চলে যায় কাচদণ্ডের ঋণাত্মক আধান সেই পরিমাণ হ্রাস পায় অর্থাৎ কাচদণ্ডে সেই পরিমাণ ধনাত্মক আধানের উদ্ভব হয়। কাচদণ্ড থেকে রেশমি কাপড়ে যে পরিমাণ ঋণাত্মক আধান স্থানান্তরিত হয় রেশমি কাপড়েও ঠিক সেই পরিমাণ ঋণাত্মক আধানের উদ্ভব হয়। অর্থাৎ ঘর্ষণের ফলে কোনো নতুন আধানের সৃষ্টি হয় না বরং এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে আধানের স্থানান্তর ঘটে।

বিন্দু আধান :

 আধান আহিত বস্তুর বাইরের পৃষ্ঠে অবস্থান করে। একটি আহিত বস্তু যখন খুব ছোট হয় অর্থাৎ বস্তুটি যদি খুব ছোট বিন্দুর ন্যায় হয় সেই বস্তুর আধানকে বিন্দু আধান বলে। তড়িৎগ্রস্ত বস্তুগুলোর মধ্যকার দূরত্বের তুলনায় তাদের আকার যদি খুব ছোট হয় তখন তাদেরকে বিন্দু আধান বিবেচনা করা যায়। কোনো বস্তুর আধানকে বিন্দু আধান বিবেচনা করলে আধান সংক্রান্ত হিসাব নিকাশ সহজে করা যায়।

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.